অটোর লাইসেন্স দিয়েই তুফান হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা

প্রকাশঃ আগস্ট ৫, ২০১৭ সময়ঃ ১:২৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:২৬ অপরাহ্ণ

বগুড়া প্রতিনিধি:

বগুড়ায় ধর্ষণের পর কিশোরী ছাত্রী ও তার মাকে মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতনের মূলহোতা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকারের বিরুদ্ধে একটার পর একটা অপকর্মের অভিযোগ আসছেই। তার বিরুদ্ধে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মালিকানা লাইসেন্স দেওয়া ও দৈনিক চাঁদা মিলে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ক্ষমতাসীনদের প্রভাব খাটিয়ে তুফান সরকার প্রতি দিন ৩ হাজার অটোরিকশা থেকে ৬০ হাজার টাকারও বেশি চাঁদা তুলতেন। আর তার স্বাক্ষরিত মালিকানা লাইসেন্স ছাড়া বগুড়া শহরে কেউ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চালাতে পারেননি।

একটি অটোরিকশার মালিকানা লাইসেন্স পেতে তুফানকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক।পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় এবং পৌরমেয়রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি এসব করলেও কেউ বলার সাহস দেখাননি।

জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে বগুড়া শহরে তিন হাজারের অধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নেমেছে। এদের জন্য তুফান সরকার একাই মালিক সমিতি গঠন করে তার সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করে বসেন।

অবাক করার বিষয় তার এই কমিটিতে কোনো সভাপতি, সহ-সভাপতি বা অন্য কোনো সদস্য নেই।এই কমিটিই অটোরিকশার মালিকানা লাইসেন্স দিয়ে এসেছে। লাইসেন্সের টাকা ছাড়াও প্রত্যেক দিন তুফানকে ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় অটোচালকদের।

তুফানের নির্ধারিত বাহিনীকে এই টাকা পরিশোধ না করলে অটোর চাবি নিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৫ সাল থেকেই তুফানের এই নৈরাজ্য চলছে।

তবে বগুড়া জেলা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ প্রথম রমজান থেকে শহরের সাতমাথা এলাকায় এসব অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং আটক অভিযান চালায়। এরপর তুফান সরকারের মালিকানা লাইসেন্স ও দৈনিক চাঁদাবাজি বন্ধ হয়।

হিসাবে দেখা গেছে, তিন হাজার অটোরিক্সার মালিকানা লাইসেন্সে বাবদ ৫ হাজার টাকা করে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়েছেন তুফান। আর প্রত্যেক দিন ২০ টাকা করে প্রায় ৬০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে। মাস শেষে শুধুমাত্র চাঁদা থেকেই দেড় কোটির উপরে আয় তুফানের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া শহরতলীর এক অটোরিকশার গ্যারেজ মালিক জানান, তিনি ১০টি অটোরিকশা কিনেছেন। বগুড়া পৌরসভার নামে দেওয়া এসব মালিকানা লাইন্সেস নিতে তুফানকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে।

সম্প্রতি কিশোরীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় তুফান সরকার বর্তমানে রিমান্ডে আছেন। এরপর অনেকেই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
বগুড়া সদর ট্রাফিক ইনচার্জ বিকর্ণ বাবু জানান, অটোরিকশার বিষয়ে কেন্দ্রীয় কোনো নিদের্শনা নেই। এজন্য অটোরিকশায় তুফান সরকারের নৈরাজ্যের বিষয়ে আমাদের তেমন কিছু করার ছিল না।

এ বিষয়ে বগুড়া পৌরমেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান জানান, পৌরসভা মটরচালিত কোনো অটোরিকশার লাইসেন্স দিতে পারে না। পৌরসভার নাম ভাঙিয়ে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার মালিকানা লাইসেন্স দিয়েছেন বলে আমরাও শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ না করায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেলে ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি ও তার সহযোগীরা এবং স্ত্রীর বোন নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকিকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন।

ঘটনার ১০ দিন পর গত ২৮ জুলাই নির্যাতিতা কিশোরী ও তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চার ঘণ্টা ধরে তারা নির্যাতন চালায়। এরপর দু’জনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন।

এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা সরকার, আশা সরকারের বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলা করেন।
এর মধ্যে এজাহারভুক্ত নয়জনসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আর তুফান সরকারকে শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর তার বড় ভাই আব্দুল মতিন সরকারকেও শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রতিক্ষণ/এডি/রন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G